দশম শ্রেণীর বাংলা মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্ক এর সমস্ত প্রশ্ন এবং উত্তর পার্ট ৩ || Model Activity Task Class 10 Bengali Part 5
১.১) "গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা"- হরিদা কোন গল্প শুনেছেন?
উ:- 'বহুরূপী' গল্প অবলম্বনে, জগদীশবাবুর বাড়িতে এক উঁচুদরের সন্ন্যাসীর আগমন,পায়ের ধুলো দেওয়া্র কৌশলে ওই সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর সোনার বোল লাগানো খড়ম ও একশো টাকার প্রণামী গ্রহণের অদ্ভুত গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন।
১.২) "বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী"- উদ্ধৃতাংশে 'বিধুমুখী'কে?
উ:- 'অভিষেক' কাব্যাংশ অবলম্বনে , উদ্ধৃতাংশে উল্লেখিত 'বিধুমুখী' হলেন- ইন্দ্রজিৎ তথা মেঘনাদের স্ত্রী প্রমিলা সুন্দরী।
১.৩) "মাভৈঃ মাভৈঃ"- এমন উচ্চারণের কারণ কী?
উ:- 'প্রলয়োল্লাস' কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম "মাভৈঃ মাভৈঃ" এই প্রতীকী শব্দের ব্যবহার করেছেন- এই ৯a - এই করেছেন- এই জগৎজোড়া প্রলয় তথা ধ্বংসাত্বক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে পরাধীন ভারতবাসীর মনে হতাশার মেঘ সরিয়ে সাহস, নির্ভীকতা সঞ্চারের মধ্য দিয়ে অভয়বাণী শোনানোর জন্য।
১.৪) "... দুজন বন্ধু নোক আসার কথা ছিল,"থেকে আসার কথা ছিল?
উঃ- ‘পথের দাবী’ গল্পে গিরিশ মহাপাত্র জানিয়েছেন এনাঞ্জাং থেকে তার দুজন বন্ধ্য আসার কথা ছিল।
২.১" আঁ,? ওটা কি একটা বহুরূপী নাকি ?" - প্রশ্নটি কাদের মনে জেগেছে? তাদের মনে এমন প্রশ্ন জেগেছে।
উত্তর:- উর্ধিত অংশটি কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ রচিত 'বহুরূপী' গল্প থেকে গৃহীত হয়েছে।
v কোন এক সন্ধ্যাকালীন পরিবেশে,শহরের জমজমাট রাস্তায়, এক বাইজির রূপ দেখে শহরে নতুন আগত যে-সমস্ত মানুষ-জন মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল, তাদের মনে এই প্রশ্ন জেগেছিল।
v ব্যস্ত শহরে সন্ধ্যা নামতেই বাইজির ছদ্মবেশে ধরে হরিদা বেরিয়ে পরেন। রূপসী বাইজির রূপ দেখে, পায়ের ঘুঙুরের মিষ্টি শব্দ শুনে, শহরে আগত নতুন মানুষজনের মনে মোহের সঞ্চার হয়। কিন্তু রাস্তার পরিচিত দোকানদার রূপসী বাইজির ছদ্মবেশের আড়ালে বহুরূপী হরিদাকে ঠিকই চিনতে পারে। হরিদার কান্ড দেখে রাস্তার পরিচিত দোকানদার হেসে ওঠে। তখনই, সুন্দরী বাইজির রূপে নেশাগ্রস্ত ঐ সমস্ত নবাগত মানুষজনের মনের গহীনে জমতে থাকা মোহ মুহূর্তে ভেঙে যায়। একজন পুরুষ বহূরূপীর কৃত্রিম। রূপের মোহে তারা মজেছিল, এটা ভেবেই তাদের চোখে-মুখে চরম হতাশা আর তাচ্ছিল্যভরা একটা প্রশ্ন উঠে আসে - "আঁ,? ওটা কি একটা বহুরূপী নাকি?
২.২ ‘নাদিলা কবুরদল হেরি বীরবরে মহাগর্বে। – ‘কর্বূরদল’ শব্দের অর্থ কী? উদ্ধৃতাংশে ‘বীরবর’ কোথায় উপনীত
হলে এমনটি ঘটেছে?
উ:- উদ্ধৃত অংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত 'অভিষেক’ কাব্যাংশ থেকে গৃহীত হয়েছে।
v ‘কর্বূরদল’ শব্দের অর্থ রাক্ষসদল বা রাক্ষসসৈন দল।
v বীরবর মেঘনাদ যখন শুনেছে, সে। প্রমোদ কাননে আনন্দরত এরই মাঝে তার প্রিয় ভাই বীরবাহু নিহত হয়েছে এবং পিতা যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত, সে দ্রুত ছুটে গেছে স্বর্ণলঙ্কায়। সেখানে গিয়ে সে দেখেছে, পিতা লঙ্কাধিপতি রাবণ যুদ্ধসাজে সজ্জিত। রাক্ষস সেনা বীরদর্পে আস্ফাল, তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। বাজছে যুদ্ধের বাজনা। যুদ্ধযাত্রার এইরকম প্রাক-মুহূর্তের আয়ােজন যখন তৈরি তার মাঝে রথীশ্রেষ্ঠ ইন্দ্রজিতের উপস্থিতি রাক্ষস সৈন্যদের মনে গর্ব তথা সাহসের সঞ্চার ঘটিয়েছে। তাই সৈন্যসমাবেশে ইন্দ্রজিৎ উপস্থিত হওয়া মাত্রই সমস্ত রাক্ষসসৈন দল উল্লাসে গর্জন করে উঠেছে।
২.৩ ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর।” – কার জয়ধ্বনি করতে কবির এই আহ্বান?কেন তার ‘জয়ধ্বনি করতে হবে?
উ:- উদ্ধৃত অংশটি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়ােল্লাস' কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে।
v কালবৈশাখীর ঝড়ের মত এসে পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতার কেতন ওড়াতে পারবে এমন ক্ষমতাসম্পন্ন, একদল নবাগত তরুণ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য কবি সমগ্র পরাধীন ভারতবাসীকে জয়ধ্বনী করতে বলেছেন।
v কবি দেখেছেন, ইংরেজদের কবলে পরাধীন ভারতবর্ষ অন্যায়,অবিচার,বৈষম্য প্রভৃতি সামাজিক অ-সুন্দরে ভরে উঠেছে। এই সমস্ত পাপাচার মুছে দেওয়ার ক্ষমতা প্রাচীনপন্থী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নেই। তাই কবি পরাধীন
ভারতবর্ষের চোখে আশার বাণী হিসেবে তুলে ধরেছেন ভয়ঙ্কর ক্ষমতা সম্পন্ন একদল নবাগত তরুণ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বরূপ। কবি জানেন এই নবাগত স্বাধীনতা সংগ্রামীরাই একমাত্র পারবে ঝড়ের মত এসে সমাজের যাবতীয় অসুন্দরকে ধ্বংস করে, পুরাতন জরাজীর্ণ মনোভাবের মূলে কুঠারাঘাত করে,ভারতবর্ষের পরাধীনতার লাঞ্ছনা মুছে দিয়ে স্বাধীনতার কেতন ওড়াতে। তাই কবি এই নবাগত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য সমগ্র পরাধীন ভারতবাসীকে জয়ধ্বনি করতে বলেছেন।
২.৪ ‘কিন্তু ইহা যে কতোবড়ো ভ্রম...' কোন্ ভ্রমের কথা এক্ষেত্রে বলা হয়েছে?
উ:- উদ্ধৃত অংশটি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত 'পথের দাবী' গল্প থেকে গৃহীত হয়েছে।
ভ্রোমো যাওয়ার সময় অপূর্ব ট্রেনের ফাস্ট ক্লাস প্যাসেঞ্জারের টিকিট । ট্রেনের মধ্যে রাতের খাওয়া শেষ করে সে পরিতৃপ্ত মনে ঘুমাতে ঘুমাতে গিয়েছিল। অপূর্বর মনে ভরসা ছিল- সে ফাস্ট ক্লাস প্যাসেঞ্জার তাই রাত্রে তার শান্তির ঘুমে হয়ত কোনোভাবে ব্যাঘাত পড়বেনা। কিন্তু সেই রাতেই পুলিশের লোক তিনবার ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছিল। ঘুম ভাঙিয়ে পুলিশের লোক তার নাম ধাম ঠিকানা বারবার জানতে চেয়েছিল। সেই রাত্রে ট্রেনের মধ্যে তার শান্তির ঘুম হয়নি। অর্থাৎ অপূর্ব ট্রেনের মধ্যে যে সুন্দর শান্তির ঘুমের আশা করেছিল সেটাই ছিল অত্যন্ত ভ্রম বা ভুল।
৩.১ বড়ো চমৎকার আজকে এই সন্ধ্যার চেহারা। – ‘বহুরূপী’ গল্প অনুসরণে উক্ত সন্ধ্যার দৃশ্য বর্ণনা করো।
উ:- উদ্ধৃত অংশটি কথা সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ রচিত 'বহুরূপী' গল্প থেকে গৃহীত হয়েছে।
যে বিশেষ সন্ধ্যায় এক জব্বর খেলা দেখানোর জন্য হরিদা বিরাগীর ছদ্মবেশ ধরে জগদীশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিল গল্পের মধ্যে উঠে এসেছে সেই সন্ধ্যার চমৎকার বর্ণনা।
v আগেও শহরের গায়ে চাদের আলো পড়েছে কিন্তু উক্ত সন্ধ্যায় চাঁদ যেভাবে তার উজ্জ্বল, স্নিগ্ধ জোৎস্না নিয়ে হাজির হয়েছিল চাদের এমন রূপ আগে কখনও দেখা যায়নি।
v উক্ত সন্ধ্যায় স্নিগ্ধ চাদের আলোয় শহরের পরিবেশ, চতুর্দিক হয়ে উঠেছিল উজ্জ্বল আলোকময়। সেই উজ্জ্বলতার
মধ্যে ছিল এক মোহময় স্নিগ্ধ শান্তি। সন্ধ্যাকালীন পরিবেশে এরকম স্নিগ্ধ-শান্ত প্রকৃতির অনুভূতি ছিল শহুরে মানুষদের
কাছে বিরল।
v সেই সন্ধ্যায় ফুরফুরে বাতাস এই স্নিগ্ধ পরিবেশকে আরও মনোরম করে তুলেছিলো যা বাড়ির বাগানের গাছেরাও হয়ে উঠেছিল ঝিরিঝিরি শব্দে কলরব মুখর।
এভাবেই প্রকৃতির সমস্ত উপাদান মিলেমিশে উক্ত সন্ধ্যায় তৈরি হয়েছিল - বড় চমৎকার এক সন্ধ্যার চেহারা।
৩.২ ‘ছিড়িলা কুসুমদাম রোষে মহাবলী’ – ‘মহাবলী’ কে? তিনি রুষ্ট কেন?
অংশটি মাইকেল মধূসূদন দত্তের লেখা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ থেকে গৃহীত হয়েছে।
v উদ্ধৃতাংশে উল্লেখিত 'মহাবলী' হলেন - ত্রিভুবনজয়ী বীরশ্রেষ্ঠ মেঘনাদ তথা রাবণ পুত্র ইন্দ্রজিৎ।
v মেঘনাদ যখন প্রমোদকাননে বিলাসকলায় মগ্ন তখন দাইমা প্রভাসার ছদ্মবেশ ধরে দেবীলক্ষ্মী তার সম্মুখে হাজির হয়। দেবী লক্ষ্মী ইন্দ্রজিৎকে জানায়-
(ক) বীর চুড়ামণি বীরবাহু রামচন্দ্রের হাতে নিহত
(খ) রামের সৈন্যরা লঙ্কাপুরী ঘিরে ফেলেছে।
(গ) পিতা রাবণ যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত হচ্ছেন।
যে রামচন্দ্রকে গত সন্ধ্যায় হত্যা করে এসেছে তার দ্বারা ভাইয়ের মৃত্যু, দেবীর মুখে এই অদ্ভুত বার্তা শুনে ইন্দ্রজিৎ চমকে ওঠে। শত্রুসৈন্য লঙ্কা ঘিরে ফেলছে, সে বীরশ্রেষ্ঠ হয়ে নারীদের সাথে বিলাসকলায় রত, এটা ভেবেই ইন্দ্রজিতের মনে ধিক্কার বোধ জন্মায়। সে নিজের এই কাপুরুষোচিত আচরণের জন্য অত্যন্ত রুষ্ট, ক্রোধান্বিত হয়ে ওঠে। অত্যন্ত ক্রোধে ইন্দ্রজিৎ তার অঙ্গের সমস্ত সাজসজ্জা ছুড়ে ফেলে দেয়।
৩.৩ ‘প্রলয় বয়েও আসছে হেসে – মধুর হেসে। – কে আসছেন? তার হাসির কারণ বিশ্লেষণ করো।
উ:- উদ্ধৃতাংশটি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'প্রলয়োল্লাস' থেকে নেওয়া হয়েছে।
v উদ্ধৃতাংশে কবি মহাকালরূপী, অত্যান্ত শক্তিশালী একদল নবাগত তরুণ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আসার কথা উল্লেখ করেছেন।
v ইংরেজ কবলিত পরাধীন ভারতবর্ষে কবি লক্ষ করেছিলেন চারিদিকে অ-সুন্দরের দাপাদাপি তিনি দেখেছিলেন মানুষের জীবন থেকে এই অসুন্দর মোচনে প্রাচীনপন্থী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কর্মপ্রয়াস ব্যর্থ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এই ব্যর্থতা থেকেই জন্ম নিচ্ছে,উঠে আসছে একদল নবাগত তরুণ স্বাধীনতা সংগ্রামী। যারা মহাকাল শিবের মত ক্ষমতাশীল। কবি অনুভব করেছিলেন চারিদিকে এই নবাগত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আগমনবার্তা ধ্বনিত তারাই পারবে এই অবক্ষয়িত সমাজকে ধ্বংস করে নতুন সমাজ গড়তে। তারা ঝড়ের মত অসুন্দরের বিনাশ করে, আনন্দময় চিরসুন্দরের প্রতিষ্ঠা করবে।" তাই কবি ওই ধ্বংসকারী নবাগত তরুণ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিধ্বংসী রূপের মধ্যে লক্ষ্য করেছেন আনন্দ অনুভব করেছেন ধ্বংস মানে নতুন সৃষ্টি। তাই, নতুন সমাজ গঠনের জন্যই ওই বিধ্বংসীদের মুখে ফুটে উঠেছে মধুর হাসি। এই হাসির মধ্যেই লুকিয়ে আছে সমাজে সত্য-শিব-সুন্দরের প্রতিষ্ঠার মধুর বার্তা।
৩.৪ ‘বাবুজি, এসব কথা বলার দুঃখ আছে। – বক্তা কে? কোন্ কথার পরিপ্রেক্ষিতে সে একথা বলেছে?
উ:- উদ্ধৃতাংশটি প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র গল্প চট্টোপাধ্যায় রচিত 'পথের দাবী' নামাঙ্কি থেকে গৃহীত হয়েছে।
v উদ্ধৃতাংশে উল্লেখিত মন্তব্যের বক্তা অপূর্বর বন্ধুপ্রতিম সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকর।
v একদিন টিফিনের সময় অপূর্ব তার সহকর্মী বন্ধু রামদাস তলওয়ারকরকে 'পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে গ্রেপ্তার করার নামে পুলিশের চরম আহাম্মকীর এক গল্প শোনায়। সেই গল্পে উঠে আসে বিরাট মাপের পলিটিক্যাল সাসপেক্ট-কে ধরতে গিরিশ মহাপাত্রের মতো নিরীহ,সাধারণ মানুষকে ধরে, উৎপীড়ন করে পুলিশের
v চূড়ান্ত নির্বুদ্ধিতার পরিচয়।
অপূর্ব জানায়, এই পুলিশরা তার নিজের আত্মীয় তথা বাংলার পুলিশ তাই তাদের এই আহাম্মকের মতো কান্ড-কারবার অত্যান্ত লজ্জা দায়ক।এই আহম্মক পুলিশেরা অত্যান্ত আপনজন হলেও যাকে গ্রেপ্তার করার জন্য তারা উদ্গ্রীব সেই স্বাধীনতা সংগ্রামী তার কাছে অনেক বেশী আপন কারণ, যে মানুষটি তার সর্বশক্তি উজাড় করে এই পরাধীন ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য উদগ্রীব সচেষ্ট অপূর্বর কাছে তার সম্মান সব থেকে বেশি। অন্যদিকে, ইংরেজদের চাটুকারিতা করে যে দেশজ পুলিশরা এই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গ্রেপ্তার করতে ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামকে স্তব্ধ করতে বদ্ধপরিকর তারা যত আপন-ই হোক না কেন অপূর্ব তাদেরকে সমর্থন করে না।
অপূর্বের মুখ থেকে এই কথার প্রসঙ্গ ধরেই রামদাস আ্লোচ্য উক্তিটি করে- "বাবুজি এসব কথা বলার দুঃখ আছে'। অর্থাৎ, ইংরেজ শাসকদের কাছে রাজদ্রোহকে রাজদ্রোহীর অপরাধের সমান অপরাধ বলে বিবেচিত হতে পারে। অপূর্বের জীবনে দুঃখ ঘনিয়ে আসতে পারে।
৪.১ ‘এজন্য চরিত্র চাই, গোঁয়ার রোখ চাই’। – ক্ষিতীশ সিংহ কীভাবে কোনির ‘চরিত্র” এবং “গোয়ার রো’ তৈরিতে
সচেষ্ট হয়েছিলেন?
উ:- উদ্ধৃতাংশটি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মতি নন্দী রচিত 'কোনি' উপন্যাস থেকে গৃহীত হয়েছে।
এক সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে হয়ে কোনির ভারত সেরা সাঁতারু হয়ে ওঠার পিছনে প্রধান কান্ডারী ছিলেন। শিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ। চরিত্র নির্মাণ থেকে শুরু করে মনোবল নির্মাণ পর্যন্ত কোনির জীবনের সর্বস্তরে ক্ষিতীশ সিংহের অবদান ছিল অবিস্মরনীয়।
কোনির চরিত্র গঠনে গিরীশচন্দ্রের ভূমিকাঃ- গঙ্গার ঘাটে। কোনিকে দেখামাত্রই কোচ ক্ষিতীশ সিংহের চোখে এক নতুন প্রতিভা ধরা পড়েছিল। তারপর আলাপ হতেই ক্ষিতীশ বুঝেছিল এরমধ্যে প্রতিভা রয়েছে কিন্তু অভাবের তাড়নায় নেই শৃঙ্খলাবোধ। তাই ক্ষিতীশ-"আকাশ থেকে আগুন ঝরলেও কোনির চলা যাতে না থামে" তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল কোনির চরিত্রে শৃঙ্খলা আনতে-
(ক) প্রথমেই কঠোর অনুশীলনের ব্যবস্থা করে— কোনির জন্য। সকাল সাড়ে ছটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত একটা ছকে বেঁধেছিলেন কোনির সাঁতার শেখার সময়কে। প্রতিভা ধরা পড়েছিল।
(খ) ডিম,কলা,রুটি প্রভৃতি খাবারের লোভ দেখিয়ে কোনিকে ঘন্টার পর ঘন্টা অমানুষিক পরিশ্রম করিয়েছিলেন৷ ক্ষিতীশ। জানতেন খাবারের লােভ দেখিয়ে, পরিশ্রম করানো এবং তা না দেওয়া অন্যায়। কিন্তু সময় আর যন্ত্রণা এই দুটোর মূল্য শেখানোর জন্য এই ব্যবস্থা তিনি করেছিলেন।
(গ) ক্ষিতীশ পিতৃস্নেহ, পিতৃশাসন দুই প্রদান করেছিলেন কোনিকে। পরিশ্রমে ক্লান্ত কোনি ঘুমিয়ে গেলে তিনি পিতার মতোই স্নেহে দিতেন। আবার সাঁতার শেখার সময় অমনোযোগিতার লক্ষ করলে তিনি কঠোর শাসন করতেন।
(ঘ) অভিভাবকের মতই ক্ষিতীশ কোনির থাকা-খাওয়া,কাজের ব্যবস্থা করেছিলেন। যাতে সে দুবেলা খেতেপারে। স্বপ্নকে আরো সুষ্ঠু করতে পারে।
গোঁয়ার রোখ নির্মাণে ক্ষিতীশের অবদান:- ক্ষিতীশ লক্ষ্য করেছিলেন কোনির প্রতিভা আছে, স্বপ্ন আছে কিন্তু নেই জেদা তাই বিভিন্ন উপায়ে ক্ষিতীশ কোনির মনে আগুন জ্বেলে ছিলেন। যাতে যে-কোন বাধা অতিক্রম করে কোনো কিছুকে পাওয়ার তীব্র জেদ তৈরি হয়।
(ক) ক্ষিতীশ দারিদ্রতার কাছে পদে-পদে হেরে যাওয়ার আক্রোশ কোনিকে বুকের মধ্যে পুষে রাখার শুনিয়েছিলেন।
(খ) ক্ষিতীশ বারবার কোনির সামনে অন্যান্য সাঁতারুর তুলনা রেখেছিলেন। যাতে অপরকে হারানোর একটা জেদ তৈরি করে কোনির মনে।
(গ) কোনির জীবনে পাওয়া অপমানগুলিকে ক্ষিতীশ বারবার তাকে মনেপরিয়ে দিয়েছিলেন। হিয়া, আমিয়ার অপমানকে সামনে রেখে কোনিকে শিখিয়েছিলেন সমস্ত বঞ্চনা-যন্ত্রণাকে হারিয়ে দেওয়ার মন্ত্র।
(ঘ) কোনির জীবনে প্রত্যেকটা বঞ্চনা প্রতিক্ষিতীশ। এক-একটা প্রতিশোধের মতো সামনে তুলে ধরেছিলেন। যাতে তার মনে প্রতিশোধের একটা আগুন তৈরি হয়।
এভাবেই ক্ষিতীশ সিংহের দেখানো পথেই কোনির অগোছালো প্রতিভা সুষ্ঠু চারিত্রিক দৃঢ়তার সাথে অসম্ভব এক জেদের দিয়ে সর্বসেরা হয়ে উঠেছিল।
৪.২ ‘ক্ষিদা, এবার আমরা কী খাব?’ – উদ্ধৃতিটির আলোকে কোনির যন্ত্রণাবিদ্ধ জীবনযাত্রার পরিচয় দাও?
উ:- উদ্ধৃতাংশটি প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক মতি নন্দী রচিত 'কোনি' উপন্যাস থেকে গৃহীত হয়েছে।
কোনির জীবনযাত্রা:- উপন্যাসের শুরুতেই বারুনির আম কুড়ানোর মধ্য দিয়ে আমরা কোনির দারিদ্রপিড়িত,যন্ত্রণাক্লিষ্ট জীবনযাত্রার পরিচয় পাই। পরে একমাত্র রোজগেরে দাদার মৃত্যুযন্ত্রণাকে সামনে রেখে- ‘ক্ষিদ্দা এবার আমরা কী খাবো" কোনির এই নিদারুণ আর্তনাদের মধ্য দিয়ে আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে কোনির জীবনযাত্রার উপাখ্যান।
জানা যায়-
(ক) কোনিদের সাত ভাই বোনের এক বিরাট সংসার। সেখানে খেতে না-পাওয়ার যন্ত্রনা নিত্যসঙ্গী। বাবা যক্ষায় মারা যাওয়ার পর কোনির বড় দাদা কমল সংসারের দায়িত্ব ধরেছিল। হঠাৎ করে তারও মৃত্যুর হলে কোনিরা এখন চূড়ান্তভাবে আশ্রয়হীন, অভিভাবকহীন। তাদের নেই কোনো প্রকার খাদ্যের সংস্থান।
(খ) রোজকার দু-বেলা খাওয়া কোনিদের হয়ে ওঠেনা৷ কাচা লঙ্কা, কাচা পেঁয়াজ, ফ্যান, সামান্য ভাত আর তেতুল এইটুকুই তাদের সংসারের পাঁচটি প্রাণীর বাঁচার উপাদান।
(গ) তাদের জীবনযাত্রার মধ্যেও আছে নিদারুণ অভাবের 'ছাপ। বস্তির মধ্যে, থকথকে নর্দমার পাশে কোনি ঘর। সেই।
ঘরে আছে একটিমাত্র তক্তপোশ। চিটচিটে কয়েকটা বালিশ। একটি ঘরেই থাকা-খাওয়া সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম।
(ঘ) প্রত্যেক পদক্ষেপে অভাব ছিল কোনিদের জীবনের চূড়ান্ত বাধা। এই বাধাই কোনির দাদা কমলের সাঁতারু স্বপ্নকে অকালেই পঙ্গু করে দিয়েছিল। কোনির বাকি ভাই বোনের জীবনেও এভাবেই নেমে এসেছিল শিক্ষা-দিক্ষা, রুচিহীন নিদারুণ শৈশব।
এভাবেই, ক্ষিতীশ সিংহের কাছে কোনির চূড়ান্ত হাহাকারের। মধ্য দিয়ে আশ্রয়হীন,খাদ্যসংস্থান হীন, এক নিদারুণ দারিদ্র্যপীড়িত জীবনযাত্রার পরিচয় পাওয়া যায়।
Online Collected.
0 Comments